ফের আওয়ামী লীগে যোগ দিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মন্জুর আলম। প্রায় অর্ধযুগ আগে আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ২০০৯ সালে একবার মেয়রও নির্বাচিত হয়েছিলেন এই রাজনীতিক। হয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাও। কিন্তু গত বছর ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত চসিক নির্বাচন চলাকালে তিনি বিএনপি তথা রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বসলে, তার অনুসারীদের কেউ কেউ হতবাকই হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন নির্বিকার। অবশেষে জাতীয় শোক দিবসের দিনই তিনি পুনরায় ফিরে এলেন আওয়ামী লীগে। বললেন, ‘অভিমান করে কিছুদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির বাইরে গেলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাইরে ছিলাম না কখনো। আমার নাতিসহ আমাদের চার প্রজন্ম আওয়ামী লীগ রাজনীতির উত্তরাধিকার। মাঝে সাময়িক ভেদাভেদ থাকলেও আমাদের পরিবার এখন একই আদর্শে বিশ্বাসী এবং আওয়ামী লীগের পতাকাতলেই সংঘবদ্ধ।’
এদিকে মন্জুর আলমের ফিরে যাওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নবনির্বাচিত সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘মন্জুর আলম কখনই বিএনপির আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন না। ছিলেন সুযোগসন্ধানী। তার মতো ভিন্নমতাদর্শের রাজনীতিকদের বিএনপিতে এনে “দুধকলা দিয়ে সাপ পোষা”র শামিল বলে আমি মনে করি। এবং আজকে সেটাই প্রমাণিত। দুর্বল হলেও প্রয়োজনে নিজেদের কাউকে নার্সিং করে দলে প্রতিষ্ঠা করা উচিত। তাতে লাভ হয় বেশি, ক্ষতি হয় না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মন্জুর আলমের বাবা আমৃত্যু আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আবদুল হাকিম কন্ট্রাক্টর স্বাধীনতার আগে থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। স্বাধীনতার পর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিও ছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য। মন্জুর আলম নিজেও আওয়ামী লীগের হয়ে তিনবার সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ছিলেন। এবার নিজের প্রতিষ্ঠিত ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’-এর ব্যানারে এম মন্জুর আলম পালন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দুস্থদের মধ্যে বস্ত্র ও খাবার বিতরণ করা হয়। শোক দিবসের দিন সকালে নগরীর উত্তর কাট্টলী বাগানবাড়িতে খতমে কোরআন, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করেন তিনি। মন্জুর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তারই বড় ভাইয়ের ছেলে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মো. দিদারুল আলম। ওই দিন বিকালেই আকবর শাহ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলতান আহমদ, সাধারণ সম্পাদক কাজী আলতাফসহ অন্যরা ফুল দিয়ে মন্জুর আলমকে আওয়ামী লীগে বরণ করে নেন।
মন্জুর আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি আওয়ামী পরিবারেরই সন্তান। আমার রাজনৈতিক আদর্শ বঙ্গবন্ধু। আমার প্রধান ধর্ম হচ্ছে মানুষের সেবা করা, জনগণের কল্যাণ করা। তাই বৃহৎ পরিসরে জনসেবা করতে গিয়েই আমি অন্য দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম।’
যখন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন, তখনো মেয়র হিসেবে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করেছেন জানিয়ে মন্জুর আলম বলেন, ‘১২ বছর আগে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। বর্তমানে এ সংগঠনের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। সভাপতি হিসেবে আছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।’
বঙ্গবন্ধুকে মনেপ্রাণে ধারণ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছাকে আমার মায়ের মর্যাদা দিয়েছি। আগামী প্রজন্মও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করবে। আমার ১১ বছরের এক নাতি শেখ রাসেল জাতীয় শোক দিবস উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক। আমাদের পুরো পরিবার আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী।’
পাঠকের মতামত: